আজ || রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
শিরোনাম :
 


সংগ্রাম – স্বাধীনতা প্রেরণায় বঙ্গমাতা

মহীয়সী নারী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ওরফে রেনু। বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী। বঙ্গবন্ধুর জীবনে যার প্রভাব ছিল অপরিসীম। আশ্চর্যের বিষয় হলো যে, মাত্র ১২/১৩ বছর বযসী বঙ্গবন্ধুর বিবাহ হয় ৩ বছর বয়সী চাচাতো বোন রেনুর সঙ্গে। অবশ্য বিবাহের পূর্বেই এই মহীয়সী নারী বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের বাবা মারা যান। মা মারা যান ৫ বছর বয়সে এবং ৭ বছর বয়সে সর্বশেষ আপন বলতে বঙ্গমাতার দাদাও মারা যান। এর পর থেকে তিনি স্বামীর পরিবারে একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে সারাটা জীবন অতিবাহিত করেছেন। বঙ্গবন্ধু তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন,- “আমার যখন বিবাহ হয় তখন আমার বয়স বার তের হতে পারে। রেনুর বাবা মারা যাবার পরে ওর দাদা আমার আব্বাকে ডেকে বললেন, তোমার বড় ছেলের সাথে আমার এক নাতনীর বিবাহ দিতে হবে । রেনুর দাদা আমার আব্বার চাচা। মুরুব্বির হুকুম মানার জন্যই রেনুর সাথে আমার বিবাহ রেজিস্ট্রি করে ফেলা হয়। আমি শুনলাম আমার বিবাহ হয়েছে। তখন কিছুই বুঝতাম না। রেনুর বয়স তখন বোধ হয় তিন বছর হবে।”

 

যিনি দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণের কথা ভেবে নিজেকে জীবনভর উৎসর্গ করেছেন। নিজ স্বামীকে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর না পাওয়ার বেদনাকে তুচ্ছ করে নিজের সুখকে বিসর্জন দিয়ে স্বামীর কাজে সহযোগিতা করেছেন। দেশ ও দেশের মানুষের কথা ভেবে দিনের পর দিন করেছেন নিরব অশ্রু বিসর্জন। তাঁর মত ধৈর্যশীলতা, মহানুভবতা ও দেশমাতৃকাবোধ এ পৃথিবীকে হতবাক করেছে। ধন্য বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা, ধন্য মাগো ধন্য।

আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখনিতে পাই, “বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির- কল্যানকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।” বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব যেন তারই উৎকৃষ্ঠ উদাহরণ। মাতৃভুমিকে শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করতে, বাংলা মাতাকে স্বাধীন করতে তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সহযোদ্ধা। স্বামীর প্রতিটি অর্জনের পিছনে যার ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর কারারুদ্ধ বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তিনি নিজে পরিবারের হাল ধরেছিলেন শক্ত হাতে। সন্তানদেরকে লেখাপড়া করানো, তাদেরকে দেখভাল করা, মানুষের মত মানুষ করা সহ শশুর-শাশুড়ীর সেবাযতœ করতে কখনো তিনি ত্রুটি করেননি। তিনি সংসারে ছেলেমেয়েদের নিয়ে অনেক কষ্ট করতেন। নিজে কষ্ট করে স্বামীর জন্য টাকা পয়সা যোগাড় করে রাখতেন যাতে স্বামীর কষ্ট না হয়। শুধু তাই নয় সংসারের শত ব্যস্ততার মাঝেও ভুলে যাননি স্বামী শেখ মুজিবুর রহমানের কথা। ভুলে যাননি স্বামীর প্রতি দায়িত্ব, কর্তব্য ও ভালোবাসার কথা। ভুলে যাননি স্বামীর অবর্তমানে রাজনৈতিক বিভিন্ন দায়িত্ব ও কর্মসম্পাদনের কথা। কখনো তিনি সংসারের সমস্থ কাজ গুছিয়ে ছুটে গেছেন কারাগারে বঙ্গবন্ধুর জন্য খাবার নিয়ে, কখনো ছুটে গেছেন দেশ মাতৃকার টানে রাজনৈতিক বিভিন্ন সংবাদ স্বামীর কাছে পৌঁছে দিতে। স্বামীর জন্য মনটা যে তাঁর সবসময় কাঁদতো। তিনি কারাগারে কেমন আছেন, কীভাবে সময় কাটাচ্ছেন, তিনি সুস্থ্য আছেন কিনা এসব খোঁজ-খবর নিতেন। কারণ স্বামীর প্রতি ছিল তাঁর অকৃত্রিম ভালোবাসা, মায়া ও মমত্ববোধ। কিন্তু নিজ কষ্টের কথা কখনো তিনি স্বামীকে বলতেন না। তবে মুখে কিছু না বললেও বঙ্গবন্ধু ঠিকই বুঝতেন। তাইতো অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছেন, “সে (রেনু) তো নীরবে সব কষ্ট সহ্য করে, কিন্তু কিছু বলে না। কিছু বলে না বা বলতে চায় না, সেই জন্য আমার আরও বেশি ব্যথা লাগে।”
তিনি শুধু বঙ্গবন্ধুর স্ত্রীই ছিলেন না, ছিলেন তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে কাছের একজন সুখ দুঃখের সাথী ও পরামর্শদাতা। রাজনীতির সংকটময় মুহূর্তে বঙ্গবন্ধুকে তিনি সাহস জুগিয়েছেন, সুপরামর্শ দিয়েছেন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানের জনসভায় যোগদানের জন্য রওনা দেওয়ার সময় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন,-‘দেশের মানুষ তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, তাদের নিরাশ করো না। যা বলার চিন্তা ভাবনা করেই বলবে।’ বিভিন্ন সংকটময় মুহূর্তে এভাবেই তিনি বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে সাহস জুগিয়েছেন। যে কারণে জীবনের কথা লিখতে যেয়ে বারবার স্ত্রী রেনুর প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এমনকি অসমাপ্ত আত্মজীবনীর মত অসামান্য জীবনকাহিনি লেখার পিছনে সবচেয়ে বড় অবদান বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জীবনের এক সুদীর্ঘ সময় জেল হাজতে কাটিয়েছেন। একবার একনাগাড়ে ১৭ থেকে ১৮ মাস তিনি কারাগারে ছিলেন । বেগম মুজিব বার বার ছুটে গেছেন জেলহাজতে স্বামীর কাছে। এ সময় তিনি স্বামীকে জীবন কাহিনী লিখে রাখার জন্য অনুরোধ করেন। কাগজ কলম পৌঁছে দেন তাঁর কাছে। তাঁরই অনুপ্রেরণায় বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের ও আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য উপহার দিয়ে গেছেন তাঁর অসামান্য জীবনকাহিনী, ঐতিহাসিক মহাকাব্য, সংগ্রামী জীবনকথা- ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ।

অসীম কুমার সরকার
সহকারী উপজলো শক্ষিা অফসিার
তালা, সাতক্ষীরা
০১৭১৮৭৬৭৩০৭৮


Top